বছর ঘুরে আবারও এলো ডিসেম্বর—বাঙালি জাতির গৌরব, অর্জন, অশ্রু ও বেদনার মাস। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে এই ডিসেম্বরেই বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা। একই সঙ্গে স্মরণ করে বেদনাময় স্মৃতি, বিশেষ করে মাসের শেষভাগে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের করুণ ইতিহাস। আজ গৌরবের ডিসেম্বরের প্রথম দিন। মৃদু শীতের আমেজে, উত্তরের বাতাসে এবং লাল–সবুজের আবহে দ্যুতিময় হয়ে ওঠে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরও পূর্ব বাংলার মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আসেনি। পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনা চলে টানা ২৩ বছর। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা দাবি, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন—সবকিছু মিলিয়ে স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৭১ সালে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তির সংগ্রামে জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এরপর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর বর্বর গণহত্যা শুরু করে। ’অপারেশন সার্চলাইট’-এর মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষ যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের মূল্যেই বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
তবে বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তেই দেশে নেমে আসে বেদনাবিধুর রাত। ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের। ফলে ডিসেম্বর যেমন উৎসবের মাস, তেমনি অশ্রু ও শোকেরও মাস।
কর্মসূচি
প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে বিজয়ের মাস ও বিজয় দিবস। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হবে যথাযোগ্য মর্যাদায়।
বিজয়ের মাস উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মাসব্যাপী যাত্রা প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রাদল অংশ নিচ্ছে এ আয়োজনে। আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে যাত্রাপালার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।


