ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে সাত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্যানে গাঁজা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল। এ চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন মেহেদী হাসান নামে এক মাদক কারবারি। তার সহযোগী মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন উদ্যানে মাদক বিক্রির নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, সাম্য ও তার বন্ধুরা নিয়মিত উদ্যানে সময় কাটাতেন এবং স্থানীয়দের মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করতেন। এতে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেই শত্রুতার জের ধরে গত ১৩ মে রাতে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য। ঘটনার রাতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে উদ্যানে যান। মুক্তমঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বিকে হাতে ইলেকট্রিক ট্রেজারগানসহ দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন সাম্য। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কবুতর রাব্বির চিৎকারে মেহেদী, রিপন, পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ও রবিন সেখানে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালায়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, কবুতর রাব্বির হাতে থাকা সুইচগিয়ার (চাকু) দিয়ে সাম্যের ঊরুতে আঘাত করা হলে তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ঘটনার আগে মেহেদী হাসান তার সহযোগীদের আত্মরক্ষার অজুহাতে সুইচগিয়ার ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অস্ত্রই সাম্য হত্যায় ব্যবহৃত হয়।
ঘটনার পর নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেয়।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন।
তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি; বরং সাম্যকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে, মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়াই হত্যার মূল কারণ। সাত আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির পাঁচটি ধারায় অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।”


