ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অংশীদার দলগুলোর প্রতি সংযম ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না। জুলাই সনদের অঙ্গীকার রক্ষায় বিএনপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তবে কেউ যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল ভেবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় বা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশল অবলম্বন করে, সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।”
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্য থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনসমর্থিত দল হিসেবে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য কমিশনের প্রতিটি দফা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বিএনপি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, “নারীদের কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলে চাকরিদাতাদের কৌশলে নারীদের নিয়োগ না দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে কর্মজীবী নারীদের মধ্যে চাকরি সংকোচনের ভয় দেখা দিয়েছে, যা কথিত গণভোটের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বের দাবি রাখে।”
তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, আর ১৮ শতাংশ মানুষ গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, আর গত ১৪ মাসে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে এক লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। “রাষ্ট্রের কোটি টাকা ব্যয় করে কথিত গণভোটের চেয়ে একটি চাকরি এখন অনেক বেশি জরুরি,” মন্তব্য করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “দেশের ব্যাংকিং খাত এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি; অন্তত ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৪ শতাংশের নিচে।” তিনি আরও যোগ করেন, “রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতই এখন অর্থনীতির একমাত্র ভরসা। অথচ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে কিছু দল আবারও রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ নিতে চাইছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীরা রাজধানীতে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গণভোটের আড়ালে এই অপশক্তিকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে কি না, তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
আন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “সরকার এখন একটি সিদ্ধান্তের সামনে—তারা কি একটি দলের ইচ্ছা পূরণ করবে, নাকি গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচনের আয়োজন করবে।”
শেষে তিনি রাজপথের আন্দোলনের সহযোগীদের উদ্দেশে বলেন, “সংবিধানে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ লেখা থাকলেই গণতন্ত্র নিশ্চিত হয় না। প্রয়োজন মনোভাবের পরিবর্তন, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সর্বোপরি দেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্য।”


