ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরে বৃহৎ পুলিশি অভিযানে অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (সিওপি৩০) ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই অভিযান চালানো হয়।
রয়টার্সের তথ্যে জানা যায়, রিও রাজ্যের গভর্নর ক্লাউডিও কাস্ত্রো মঙ্গলবার অভিযানে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। গভর্নর কাস্ত্রো সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছি।”
তিনি জানান, রাজধানীর আলেমাও ও পেনহা ফাভেইলা কমপ্লেক্সজুড়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ নিরাপত্তা সদস্য অংশ নেন। অভিযানের সময় অপরাধী গোষ্ঠীগুলো পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ির গতি বাধাগ্রস্ত করতে কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
চোখে দেখা সাক্ষীদের মতে, আগুনের ধোঁয়ায় সকালবেলার আকাশ ঢেকে যায় এবং গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। পুলিশ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র সন্দেহভাজনরা গ্রেনেড সজ্জিত ড্রোন ব্যবহার করে পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে।
অভিযান শেষে রয়টার্স–এর এক প্রতিবেদক জানান, পুলিশের বিশেষ ইউনিট কয়েকজন পুরুষকে আটক করে একত্রে রেখেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদের পরিবারের সদস্যদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
রিও রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই অভিযান কমান্দো ভের্মেলহো (Comando Vermelho) নামের শক্তিশালী অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অভিযানে ২৫০ জন ফেরারীকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্য ছিল; তবে ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। অভিযান চলাকালে শহরের বিভিন্ন স্কুল ও হাসপাতালের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় এবং রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী রিকারদো লেভানদোভস্কি বলেন, এই প্রাণঘাতী অভিযানের আগে রিও রাজ্য কর্তৃপক্ষ ফেডারেল সরকারের কাছে কোনো সহায়তা চায়নি। ঘটনার বিস্তারিত তিনি গণমাধ্যম থেকেই জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন।
সামরিক ধাঁচের এই অভিযান নিয়ে ব্রাজিলের কয়েকটি সিভিল সোসাইটি সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা একে ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকারের জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আগামী নভেম্বরে আমাজন অঞ্চলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (সিওপি৩০) ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোয় রিওতে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


